ভালোবাসা কারে কয়, সে কি কেবলি যাতনাময় ?

অনিতার সাথে আমার প্রথম দেখা আমাদের ডিগ্রি অনার্স ক্লাসে সেই সাত বৎসর আগে । ছোটোবেলা থেকেই অন্য শহরে থেকেছি, পড়াশুনা করেছি । হাইয়ার সেকেন্ডারি পাশ করে চলে এলাম এই শহরে বাড়িতে থেকেই ডিগ্রি পড়ব বলে । অনিতাকে প্রথম দেখেই আমার খুব ভালো লাগলো সুন্দরতো বটেই তার সাথে কি শান্ত নম্র  এবং মিষ্টি স্বভাবের – ঠিক যেমন মেয়ে আমার পছন্দ । শহরে নুতন ছিলাম বলে কলেজে প্রথম এক মাসে বন্ধুবান্ধবও তেমন কেউ হয়নি – মেয়ে বন্ধুরতো প্রশ্নই উঠে না কোএড স্কুলে পড়াশুনা করেছি – মেয়েদের সাথে অনেক ফ্রিলি খোলামেলা ভাবে কথাবার্তা বলতে পারি । কিন্তু জানি না অনিতার সাথে কথা বলতে গিয়ে কেমন যেন অন্যরকমের অনুভুতি হত , খুব হেসিটেইট করতাম । ক্লাসের অন্য মেয়েদের নাম ধরে ডাকলেও অনিতাকে নাম ধরে ডাকতে পারতাম না । হয়তো মনে মনে নিজের অজানতে ওকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু আমি তখন এরকম কিছুই বুঝতে পারিনি । এখন অনুভব করছি । হয়তো তখন আমি আমার অনার্সের বিষয় নিয়ে ডুবে থাকতাম, পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকতাম, ভালো রেজাল্ট এর কথা ভেবে এইসব এড়িয়ে যেতাম । অনিতার মুখের হাসিটা দেখে মনে হয় রবিঠাকুরের গান – “তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই তাই অকারনে গান গাই” !! ভাগ্যিস প্রেমে পরিনি তখন – পরলে হয়তো একবারে ডিগ্রি পাশ করতে পারতাম না ! ভাগ্যিস কলেজের অন্য ছাত্রদের মত অনিতাও ক্লাসে অনেক কম উপস্থিত থাকতো । তাই হয়তো তাহার প্রতি ভালোবাসাটা জাগরিত হতে পারেনি ।


জন্মদিনে তখনও কোনও দিন কাউকে একটা চকলেটও খাওয়াইনি, কিন্তু স্নাতক প্রথম বর্ষে কি যেন মনে হল -আমি অনেকগুলো একটাকা দামের চকলেট নিয়ে আসলাম ক্লাসে, আমার নামমাত্র পকেট মানি দিয়ে । সবার সাথে অনিতাকেও দুটা চকলেট দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করলামডিগ্রির তিন বৎসর কেটে গেল , কিছু ভাবলামও না বললামও না অনিতাকে । তার পর গোটা তিন বছর ওর সাথে দেখাও নেই, যোগাযোগও নেই । থাকবেই বা কি করে , ওর মোবাইল নাম্বার ছিল না আমার কাছে, ফেসবুকে অনেক খোঁজেও পেলাম না ।


গত বছর এক দিন হটাত করে একটা শপিং মলের সামনে দেখা হল অনিতার সাথে । সময় নষ্ট না করে চট করে জিগেস করলাম “তুমি ফেসবুকে আছোতো ?” । ও বলল “হে আছি “। আবার জিগেস করলাম “ফেসবুকে কি নাম তোমার ?” বলল নিজের নামেই আছে । বাড়ি ফিরে ফেসবুকে সার্চ করে দেখলাম অনিতা ফেসবুকে একেবারে নুতন । আমার ৫০০ ফেসবুক বন্ধুর তুলনায় ওর বন্ধুর সংখ্যা সবে মাত্র ২০ । বুঝলাম ওকে ফেসবুকে খুব কম পাওয়া যাবেদুমাস পর দেখি আমাকে ফেসবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে অনিতা । মেসেজটা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলাম । অনেক দিন ধরে  ভাবছিলাম ওর ফোন নাম্বারটা যদি পাওয়া যেত । সেদিন সাহসকরে বলেই ফেললাম “কেন ইউ গিভ মি ইয়র  নাম্বার ?” বেশি পতীক্ষা করতে হয়নি আমার । নাম্বারটা পেয়েই আমি ওকে একটা এসএমএস করে বললাম “থাঙ্ক ইউ!!” । সঙ্গে সঙ্গেই ওর উত্তর আসলো । এই শুরু আমাদের এসএমএস যোগাযোগ । আমাকে অনিতা জিগেস করলো কলেজে কেন কথা বলতাম না ওর সাথে । আমি বললাম “কলেজেতো তুমি খুব কম আসতে তাই আর এতটা ফ্রি হতে পারিনি তোমার সাথে” তারপর বলল ওকে “তুমি” না বলে “তুই” করে ডাকতে । কিন্তু আমার উদ্দেশ্য ছিল ওকে সারা জীবন “তুমি” করেই ডাকবো, তাই বললাম “তুমি বলেই ডাকি ... ভালো লাগে” 


দিনে দিনে এসএমএসের সংখ্যা বাড়তে থাকল । অনিতা কোথায় যাচ্ছে, কখন কি করছে সবই আমার জানা হয়ে গেলো  একটি প্রাইবভেট কম্পানিতে চাকরি করে অনিতা । সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যে সাড়েছয়টা পর্যন্ত প্রচন্ড ব্যস্ত । কিন্তু  খাটুনী হিসেবে  মাইনে অনেক কম । আমি প্রায়ই বলতাম অন্য কিছু চাকরি খুজতে না হয় মাস্টার্স ডিগ্রীটা কমপ্লিট করতে । বলেছিলাম ব্যঙ্কের পরীক্ষায় বসতে । মাঝে মধ্যে ব্যস্ততার জন্য সারা দিনে একটাও এসএমএস করতে পারতো না আমাকে অনিতার এসএমএস না আসলে কেমন যেন একা মনে হত নিজেকে, মনে হত এই বুঝি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছে , আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে আরও কত কিছু একটা এসএমএস পাওয়ার আশায় আমি অনেকবার মেসেজ করে জিগেস করতাম “Hi J... ব্যস্ত নাকি তুমি?” , “কি হল ? sms করো না যে ? L ”, “রাগ করেছো ?”, “I miss you ... একবারতো sms করো L”!! খুব টেনশন হত অনিতার মেসেজ না আসলে । অধর্য্য হয়ে মাঝে মধ্যে লিখে পাঠাতাম :
“অনেক এসএমএস যাইযে করে কোনও কথা না বলি,
তোমার এসএমএস পাওয়ার আশা দিয়েছি জলাঞ্জলী”




আর কখনও এতো রাগ উঠতো মোবাইল নেটওয়ার্কের উপর – অনেক গুরুত্বপুর্ণ সময়ে মেসেজগুলো হাওয়াতেই আটকে থাকতো ! অনেক দিন অনিতার পাঠানো “গুড মর্নিং” মেসেজটা গুড নাইটের সময় এসে উপস্থিত ! হায় কি যে সমস্যা - মেসেজ না পেয়ে অনিতার উপর রাগ হত আর মেসেজ পেয়ে নেটওয়ার্কের উপর ! কখনও কখনও অনেক এসএমএস এক সাথে আটকে থাকে এবং “রেস্টোর ফেক্টরি সেটিংস” করার পর এক সাথে ইনবক্সে চলে আসে । তাই অনেকখন ধরে অনিতার এসএমএস না পেলে এই প্রক্রিয়া করে দেখতাম ওর মেসেজগুলো হাওয়াতে আটকে যায়নিতো এসএমএসে কথা বলতে বলতে আমি যে কখন অনিতার প্রেমে পরে গেলাম বুঝতেই পারিনি মনে মনে প্লেন করছিলাম তখন কিভাবে দেখা করা যায় অনিতার সাথে । 


রবীন্দ্র জয়ন্তির দিন বিকেলে এসএমএস করলাম –
হাই ... কি করছো ?
- এইতো  গান শুনছি মোবাইলে ।
- ভালো, আজকে রবীন্দ্র জয়ন্তী তাই রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছো ?
- না,আমার কাছে একটাও রবীন্দ্রসঙ্গীত নেই । অনেক খুঁজেও পাইনি । L
- কি বলছো তুমি ? রবীন্দ্রসঙ্গীত নেই ? আমার কাছে অনেক আছে , এখন বসে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীতই শুনছি । J
- তুমি রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব ভালোবাসো, তাই না ?
 আমি রবীন্দ্রসঙ্গীতের জন্য পাগল !
- হে, ফেসবুকে তোমার আপডেট দেখে বুঝেছি ।
- আমি তোমাকে অনেকগুলো রবীন্দ্রসঙ্গীত দেব কম্পিউটার আছেতো ঘরে ? পেন ড্রাইভে দিয়ে দেব ।
 না কম্পিউটারতো নেই । L
- ঠিক আছে কিন্তু অফিসেতো কম্পিউটারেই কাজ তোমার, সেখান থেকেই নাহয় ডাটা কেবল দিয়ে মোবাইলে গানগুলো কপি করবে । ঠিক আছে এখন ?
- না, ঠিক না । অফিসে গান শুনা, কপি করা এলাউড না ।
- আচ্ছা, নো প্রব্লেম । আমি অন্য ব্যবস্থা করব ।
- কি করবে ?
- আরে তুমি দেখো কি করি ! J
কিন্তু আমাকে গানগুলো দেবে কি ভাবে ?
- অফকোর্স স্পিড পোস্টেতো আর পাঠাবো না – তোমার সাথে দেখা করেই দেব তোমাকে । দেখা করবেতো ?
 হে হে নিশ্চয়ই করব !



এক সুযোগে বলেই ফেললাম দেখা করার কথা, আর অনিতাও রাজি হয়ে গেল খুব খুশি হয়েছিলাম তখন পরের দিনই আমাদের পাড়ার বাদল কাকুর দোকান থেকে কিংস্টনের একটা ২ জিবি মেমরি কার্ড কিনে আনলাম । ১০০টি রবীন্দ্রসঙ্গীত, ২০টি নজরুলগীতি এবং কিছু আমার পছন্দের ইন্সট্রুমেন্টাল গান ভরলাম কার্ডটিতে । দেখা করার দিনটাও ফিক্স করলাম । শহরে নুতন রেস্টোরেন্ট খুলেছে দুজনেই স্থির করলাম সেখানেই দেখা করব সন্ধ্যে সাড়েছটায় – ওর অফিসের পর ।
 




প্রথম দেখা করতে যাচ্ছিলাম আমার মনের মানুসের সাথে, তাই একটু নার্ভাস ছিলাম যাই হোক দেখা করে এক এক প্লেট দোসা খেয়ে মেমরি কার্ডটা অনিতার হাতে দিয়ে খুব ভালো লাগলো । রাত্রে আমাকে এসএমএস করে বলেছিল গানগুলো ভালো লেগেছে । সেইদিনই আমার দুজন ঘনিষ্ট বন্ধুদকে সারপ্রাইজ দিয়ে জানালাম যে অনিতার সাথে রেস্টোরেন্টে গিয়েছিলাম – খবরটা পেয়ে ওরা ভিষন খুশি হয়েছিল, আমাকে বলেছিলো “গাড়ি শুরু হয়ে গেছে রে – চালিয়ে যা ”!



আইপিএল চলাকালিন জানতে পেরেছিলাম অনিতার ক্রিকেটপ্রীতি । সাধারণত মেয়েরা ক্রিকেট পছন্দ করেনা কিন্তু অনিতা ক্রিকেট দেখতে খুব ভালো পায় । এক দিন বিকেলে জিজ্ঞেস করেছিলাম “কী করছো?”। সে উত্তর দিলো “আইপিএল দেখছি”।  আমি অবাক হয়ে বললাম “তুমি ক্রিকেট দেখো ?? ?? !!!!” – সঙ্গে সঙ্গেই আমি এসএমএসের ফুলঝরি শুরু করলাম – প্রত্যেকটা সিক্স, বাউন্ডারি , উইকেটের বিবরন দিয়ে এসএমএস করতে লাগলাম । বিনিময়ে অনিতার থেকেও এসএমএস পেলাম । খেলা দেখতে দেখতে হটাত কারেন্ট চলে গেল । ইনভারটারে টিভি চলছে কিন্তু ইচ্ছে করেই এসএমএস করলাম “ইস কারেন্ট চলে গেছে !!... খেলাটা দেখতে পারব না Lঅনিতা বলল “নো টেনশন ... আমি এসএমএসে আপডেট করব স্কোর J


এক দিন হটাত অনিতা এসএমএস করে বলল একটা ভালো খবর দেবে আমাকে। কৌতুহলপুর্ণ খুশিতে জিজ্ঞেস করলাম খবরটা কি ? বলল কয়েক মাস আগে ওর অফিসে ও একজন স্টার এমপ্লয়ির মর্যাদা পেয়েছিল আর তাই তাদের কম্পানির বার্ষিক ম্যাগাজীনে অর ছবি ছেপেছে । আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছিলাম এই খবর পেয়ে । তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছিলাম এই ভেবে যে অনিতা আমাকে এই কথাটা এসএমএস করে জানিয়েছে । আমি ওকে অভিনন্দন জানিয়ে বললাম আমাকে ম্যাগাজীনটা দেখাতে । অনিতা বলল নিশ্চয় দেখাবে । আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে !! অনিতার সাথে দেখা করার আরেক সুযোগ পেলাম । দেখা করার দিন ঠিক করলাম - জায়গা জয়াস রেস্টোরেন্ট । দেবাঞ্জন আর দেবদীপকে জানালাম আমার পরবর্তি "ডেইট" এর কথা আর বিনিময়ে তাদের অভিনন্দন পেলাম । 

আমি খুবই উৎসাহিত হয়ে গেলাম অনিতার সাথে দেখা করতে । কিছু দিন আগে এসএমএসে কথাবার্তা চলাকালিন কোনও একটা কারণে অনিতা বলেছিল যে আমাকে এক দিন আইস্ক্রিম খাওয়াবে । তাই সেদিন খাদ্যতালিকা দেখার সময় ওকে বলেছিলাম আইস্ক্রিম অর্ডার করতে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আইস্ক্রিম ছিল না রেস্টোরেন্টে । তাই আর কিছু না পেয়ে লসসি আর নামমাত্র সেন্ডুইচ খেয়ে কিছু সময় গল্প করে ওর ম্যাগাজীনের ফোটো দেখে ঘরে ফিরে এলাম । সেদিন অনিতাকে "না জানে কিউ দিল ইয়ে সাতায়ে " গানটা ব্লুটুথে দিয়েছিলাম । ঘরে ফিরে বলেছিল এসএমএস করে যে গানটা ওর ভালো লেগেছে । অনিতার ব্লুটুথের নাম "Barbie"। বুঝতে পারলাম Barbie Doll খুব ভালোবাসে । মনে মনে ঠিক করলাম ওকে একটা বার্বি ডল দিতেই হবে ।




অনিতার ব্যস্ততা ক্রমেই অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছিল । সকাল ৯:৩০ থেকে সন্ধ্যে ৬:৩০ পর্যন্ত অফিস করে আবার এক দুই ঘন্টা অভারটাইমও করত । তার পর ওর বাবার সাথে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বাজত । তাই আমাকে এসএমএস করার কোন সুযোগ পেত না আমি কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠতাম অনিতার এসএমএস পাওয়ার জন্য আমি কিন্তু সত্যি সত্যি অনিতার প্রেমে অন্ধ হয়েগিয়েছিলাম কিন্তু অনিতাকে কি করে বলি আমার প্রাণের কথা ? মাঝে মধ্যে প্রেম পরজায়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখে পাঠাতাম এসএমএসে । রবিঠাকুর যে গভীর ভালোবাসার গান উপহার করে গেছেন আমাদের সেই গানগুলি কাজে লাগালাম


"ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে"
সখী ভাবনা কাহারে বলে সখী যাতনা কাহারে বলে
তোমরা যে বল দিবস রজনী ভালোবাসা ভালোবাসা
সখী ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়
তোমার মুখে চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই
......তাই অকারণে এসএমএস পাঠাই"
আমি তোমার সঙ্গে বেধেঁছি আমার প্রাণ
এসএমএস এর বাঁধনে, তুমি জানো না
আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে


আরও কত কিছু কিন্তু অনিতা খুব বুদ্ধিমান ছিল আমার এই রোমান্টিক এসএমএসকে পাত্তাই দেয়নি অনিতাকে মাঝে মধ্যে অনুরোধ করতাম আবার একদিন দেখা করার জন্য কিন্তু ও রাজি হল না নানান অজুহাত দেখিয়ে আমার প্রস্তাব এড়িয়ে গেল কিন্তু আমি দেখা করার জন্য উদগ্রিব ছিলাম হয়তো অনিতা আমার ওর প্রতি ভালোবাসার কথা বুঝতে পেরেছিল । নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল, তাইতো দেখা করতে চাইছিল না এসএমএসের সংখ্যাও কমিয়ে দিয়েছিলতাই মন খারাপ থাকতো আমার । 





একান্ত মনে ফেসবুকের Bitstrips App এ অনিতা আর আমার দৈনন্দিন এসএমএস বার্তালাপের কার্টুন বানাতাম ।  কার্টুনগুলি বানিয়ে গোপনভাবে এলবামে পোস্ট করতাম ।  সেই এলবামগুলোর প্রাইভেসি ছিল শুধু আমার আর অনিতার কাছে ।  ফোটোফানিয়াতেও অনিতার ছবিগুলো এডিট করে এলবামে পোস্ট করতাম অনিতা ফেসবুক কম করত তাই ফোটোগুলো এমএমএস করেও পাঠাতাম অনিতা সত্যি কিন্তু ছবিগুলো খুব পছন্দ করত আমাকে বলেছিল "ফোটোগুলো ফাটাফাটি হয়েছে, আরো কয়েকটা কমিক বানিয়ে পাঠিয়ো, খুব ভালো লেগেছে । কিন্তু কি ভাবে বানাও এইগুলি ?”। আমি অনিতার প্রশংসা পেয়ে খুশিতে আপ্লুত ছিলাম । রোজ তিন চারটে করে কার্টুন বানাতে লাগলাম – সবার চোখের আড়ালে ! অনিতার প্রত্যেক এসএমএসের বিভিন্ন অর্থ খুঁজে বের করতাম, এক এসএমএস্কে বার বার পরতাম, ইনবক্সের অন্য সব এসএমএস ডিলিট করে শুধু অনিতার এসএমএস রাখতাম । হায় কি ভালোবাসা !




মোবাইলে অনিতাকে জানিয়েই অনিতার ফোটো ওর কন্টেক্ট ডিটেইলস এ কলার পিকচার হিসেবে সেভ করে রেখেছিলাম । এসএমএস এলেই অনিতার হাসিমুখের ছবিটা স্ক্রিনে ফুঁটে উটতো । কিছু সময় ওর ছবির দিকে পাগলের মতো তাঁকিয়ে থাকতাম । মনে মনে গাইতাম “তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই তাই অকারণে গান গাই”। রাতে ঘুমানোর সময় অনিতার ফোটো এনলার্জ করে ফুলস্ক্রিন মোডে রেখে ঘুমাতাম । ঘুম ভাঙ্গলেই স্ক্রিন আনলক করে অনিতার মিষ্টি মুখের দর্শন  করতাম । অনিতা যে কি ভাবতো আমার সম্বন্ধে তা বুঝতে পারিনি কোনও দিন । 




একদিন অনিতার সাথে এসএমএস বিনিময় চলাকালীন জানতে পারলাম অনিতা কুকুরকে খুব ভালোবাসে । এমনকি অনিতা সেদিন আমাকে এমএমএস করে ওর একটা ছবি পাঠালো – সেখানে ওর কোলে ছিল দুদুটি কুকুর ! ছবিটিতে অনিতাকে এত মিষ্টি লাগছিলো যে আমি ওকে এসএমএস করে বললাম “তোমাকে কিন্তু খুব মিষ্টি লাগছে”অনিতা বলল “উফ !!! লাগছিলো !!”এই ফোটোটা যে কত বার যুম করেছি, এডিট করেছি , ক্রপ করেছি আমি নিজেই বলতে পারবো না । অসাধারণ লাগছিলো অনিতাকে । আমি খুব খুশি হয়েছিলাম অনিতা যে আমাকে ওর নিজের ফোটো পাঠিয়েছিল । ভেবেছিলাম অনিতা হয়তো আমাকে ভালোবাসে । কিছু দিন পরে আমি অনিতাকে বললাম আরেকটা ফোটো পাঠাতে । ও বলল “কিসের ফোটো ? আমার মোবাইলে শুধু আমার ছোটোবেলার একটা ফোটো আছে ”। আমি বললাম “Wow!! তাহলে ফোটোটা ফেসবুকে আপ্লোড করে দাও !”। অনিতা বলল “না না ফেসবুকে আপলোড করব না, তোমাকে মেসেজ করে পাঠাচ্ছি ”। হায় ! আমি এই কথা শুনে পাগলের মতো লাফিয়ে উঠলাম! অনিতা নিজের ফোটো শুধু আমার সাথে শেয়ার করতে চায় ! তাহলে কি সত্যি অনিতা আমাকে ভালোবাসে ?  অনিতার কি আমার প্রতি একটা সফট্ কর্নার আছে ? শুধু মনে মনে এই চিন্তা করে বিচলিত হয়ে উঠেছিলাম ।



অনিতা খুব রিজার্ভড চরিত্রের মেয়ে, তাই আমি নিশ্চিত ছিলাম যে ওর কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই । কিন্তু এক দিন নিজের কৌতুহলকে শান্ত করার জন্য জিজ্ঞেস করেই ফেললাম অনিতাকে ওর বিশেষ ব্যক্তির কথা । দুই বার এসএমএস করলাম – এক বার রিলায়েন্স আরেক বার এয়ারটেলের সিম দিয়ে – প্রশ্নটা যেন অনিতার কাছে অবশ্যই পৌছোয় । অনিতা কিছু উত্তর দিল না । আবার এসএমএস পাঠালাম “কি হল ? কিছু বললে না যে তোমার বিশেষ ব্যক্তির ব্যাপারে ?”। এই বার রিপ্লাই এল “ আরে না না ! এই রকম বিশেষ কেউ নেই আমার জীবনে ”। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম “সত্যি বলছোতো ?”। অনিতা হেসে বলল “উফ !! এক দম সত্যি !”। কথাটা শুনে আমার মনের আশা নতুন ভাবে জাগরিত হল । দেবাঞ্জন এবং দেবদীপকে এই খুশির খবর দিয়ে প্রেমের পথে অগ্রসর হওয়ার কিছু বুদ্ধি নিলাম । আমার পিএইচডির গবেষণার কাজ ছেড়ে আমি প্রেমের গবেষণায় লেগে পরলাম । অনিতাকে খুশি করতে নানা ধরনের অভিনব উপায় ভাবতে লাগলাম । Bitstrips এবং Photofunia ছাড়াও Google এ বিভিন্ন Photo editing software খুঁজে অনিতার ফোটগুলো নানা ভাবে সাজাতে লাগলাম, এমএমএস করে পাঠালাম এবং ফেসবুকে পোস্ট করলাম আমাদের Secret Album এ । অনিতা এক দিন বলল “তুমি কি সব কার্টুন বানাতে থাকো ?”। আমি বললাম “কেন ? তোমার ভালো লাগে না ? ”। ও বলল “ভালো লাগে J”। আমি খুব খুশি হয়েছিলাম ওর ভালো লাগার কথা শুনে ।




আগস্ট মাসে অনিতা হয়তো অনেক ব্যস্ত ছিল তাই এসএমএস অনেক কম করেছিল । তাই ভাবছিলাম অনিতার সাথে যদি ফোনে কথা বলা যেত তাহলে অনেক ভালো হত । এক দিন এসএমএস করে জিজ্ঞেস করলাম যে ফোন করলে কোন অসুবিধা আছে নাকি ওর । অনিতা বলল “এইটা আবার জিজ্ঞেসস করতে হয় নাকি ? ফোনতো করতেই পারো ”। আমার আনন্দের সীমা রইল না আর ! পরের দিনই ওর লাঞ্চ টাইমে ফোন করলাম কিন্তু অনিতা রিসিভ করল না, এসএমএস করে বলল ব্যস্ত আছে, পর কথা বলবে । কথা না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে রাত্রে অনিতাকে এসএমএস করলাম । অনিতা বলল পরের দিন নিশ্চয় রিসিভ করবে । তাই পরের দিন আবার ফোন করলাম । এইবার রিসিভ করল কিন্তু অফিসের কাজ কর্মের আওয়াজের জন্য কথা বলা অসম্ভব ছিল । প্রচন্ড ব্যস্ত ছিল অনিতা । তাই আমি নিজে থেকেই ফোন রেখে দিলাম । বললাম পরে কথা বলব । 



আরো চার-পাঁচ দিন পর ফোন করলাম ওকে রাত সাড়ে আটটায় । সেদিন অনেক সময় কথা হয়েছিল অনিতার সাথে । এত দিন পর অনিতার মিষ্টি কন্ঠ স্বর শুনতে পেলাম, ওর মিষ্টি হাসি অনুভব করলাম । অনিতার কথাতে ওর নম্রতা আর ভদ্রতা স্পষ্ট ভাবে ফোঁটে উঠে । সব সময় স্বর থাকে ওর কথায় । অত্যন্ত খুশি হলাম আমার প্রথম ভালোবাসার সাথে কথা বলে । মনে করছিল সারা রাত কথা বলেই কাটিয়ে দেই কিন্তু প্রথম অভিজ্ঞতা ছিলতো তাই কথা বলার টপিক খুঁজে পাচ্ছিলাম না । সেদিনের পর আরো তিন চার দিন কল করেছিলাম অনিতাকে কিন্তু সেই কলগুলি মিসড্ কল হয়েই রইল । রিসিভ করল না অনিতা । এক দিন শনিবারে বেলা এগারোটায় হটাত আমার মোবাইল বেজে উঠল, অনিতার হাসি মুখের কলার পিকচার স্ক্রিনে ভেসে উঠল আর আমি অবাক হয়ে রিসিভ করলাম । সেই মিষ্টি কন্ঠ জিজ্ঞেস করল “কি করছো ? ব্যস্ত নাকি ?”। আমি মনে মনে বললাম “কোনও ব্যস্ততা তোমার থেকে বেশি জরুরি হতে পারে না !”। অনিতা বলল অনেক দিন কথা হয়নি তাই ফোন করেছে । আমি এত খুশি হয়েছিলাম অনিতার ফোন পেয়ে লিখে বুঝাতে পারছি না । ভেবেছিলাম অনিতাও হয়তো আমার সাথে কথা বলতে ভালোবাসে, হয়তো আমাকে ভালোবাসে, আমার প্রপোজালের অপেক্ষা করছে !! কিন্তু আমার এই ভাবনাগুলি ছিল শুধুই ক্ষণস্থায়ী । ক্ষণস্থায়ী । আরো অনেক দিন আমার কলগুলো মিসড্ কল হয়েই রইল । যে ছিল আমার স্বপনচারিণী তারে বুঝিতে পারিনি তারে বুঝিতে পারিনি !




অনেক দিন অনিতার এসএমএস না পেয়ে কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠেছিলাম । অনিতাকে আমার মনের কথা বলার প্রচন্ড চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ফোন রিসিভ করছিল না এবং দেখাও করতে চাইছিল না অনিতা । কি আর করি ? কোনও উপায় না পেয়ে এসএমএস করেই বললাম অনিতাকে আমার মনের কথা । সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ ছিল ।  একটা-দুটা নয়, প্রায় একশ-দেড়শটা এসএমএস করেছিলাম ওই এক সপ্তাহে কিন্তু বিনিময়ে কিছুই উত্তর পেলাম না অনিতার কাছ থেকে । হয়তো রাগ করেছে অনিতা , হটাত করে এই প্রেম নিবেদন মেনে নিতে পারছে না । হয়তো আমাকে নিয়ে কোনও দিন এই ধরনের চিন্তা করেনি, শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছে আমায় , হয়তো আমাকে পছন্দ করে না, অন্য কাউকে পছন্দ করে । অনিতা খুবই সুন্দর, ফর্সা - এই জন্যই হয়তো আমার মতো শ্যামবর্ণ ছেলেকে ভালোবাস্তে পারবে না । আমার মধ্যে গুণ থাকলেও অনিতা হয়তো রূপকেই প্রাধান্য দিচ্ছে । তাই হয়ত কিছু উত্তর দিচ্ছে না । আরো কত কিছু ভাবলাম আমি । 




ঠিক এক সপ্তাহ পর অনিতা এসএমএস করল -
“তুমি এতগুলো  এসএমএস পাঠিয়েছো আমিতো সব পড়তেই পারিনি । কিন্তু যা বুঝলাম তোমার এসএমএস পড়ে... আমি অবাক হয়ে গেছি ... তুমি এত সব ভাবতে ? আমি রাগ করিনি কিন্তু আমারতো এইরকম কিছু অনুভব হয় না । ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম :
That means you won’t accept me ?
অনিতা উত্তর দিলো :

“Hmmm”
  পর   

  











Comments

  1. Replies
    1. thanks a lot !! I will be posting some more soon !!

      Delete
  2. @debashish (Y) 2mr eta podiya onk ar onk purana kotha o mone porbo :) khub bhala lagse....bt baki golpo okn o baki roilo...eta kobe paimu.... :)
    মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।
    কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
    কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে–
    ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে...tumi ai gaan ta gaiya sunao :p

    ReplyDelete
    Replies
    1. Bah ... ami ei gaan ta khub bhala pai !!! thanks ... dekhi !!

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Awesome Rabindra Sangeet !!

Bring the change ..